গল্পঃ আলোকবর্তিকা- হুমায়রা ফারজানা সাবিহা
গল্পের নাম: আলোকবর্তিকা
লেখিকাঃ হুমায়রা ফারজানা সাবিহা
খ্রিষ্টান আমার রক্তে এমনভাবে মিশে গিয়েছিলো যে কৈশোর পেরিয়েও আমি যেই ধর্ম মানছি সেটা সত্য নাকি মিথ্যা সেটা নিয়ে মাথা ঘামানোর কথা মাথাতেই আসেনি। মানতে হবে বলে মানা। সবাই তো এক সৃষ্টিকর্তাকেই মানে ডাকে। তবে মাঝে মাঝে বিভ্রান্ত হয়ে যেতাম মেলাতে পারতামনা কিছু প্রশ্নের উত্তর। আর সময়ের সাথে সাথে সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েই একটা সময় এসে বদলে গিয়েছিলো আমার সম্পূর্ণ জীবনধারা। আমি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে নতুন ভর্তি হলাম। প্রথম কোর্স ছিলো ইসলামী নৈতিকতার ওপরে। ক্লাসে স্যার ইসলামের শুনগান বর্ণনা করতেন আর আমি হতাম মহাবিরক্ত। ইসলাম নাকি একমাত্র সত্য ধর্ম, অন্য সব ধর্ম মানুষের তৈরি, শুধু ইসলামেই অন্য ধর্মগুলোর মতো পৌরাণিক কাহিনী বলতে কিছু নেই ইত্যাদি ইত্যাদি। মনে হতো তারা ইচ্ছে করেই নিজের ধর্মের প্রশংসা আর অন্য ধর্মের বদনাম করছে। মানতে চাইতো না মন। তবে পরিক্ষায় পাশের জন্য ইসলামের অনেক কিছু শিখতে লাগলাম কীভাবে কোরআন নাযিল হয়েছে, রাসূলের সুন্নাহ মোটামোটি সবকিছু জেনে ফেললাম পার্থিব জগতের জন্য। ইসলাম সম্পর্কে যত জানছিলাম তত নিজের ধর্মের প্রতি একেবারেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে লাগলাম। মনে হলো সব ধর্মই মানুষের তৈরি। একসময় ব্যক্তিগত ধর্মকর্ম একেবারেই বাদ দিয়ে দিলাম। মাঝে মধ্যে মায়ের পিড়াপীড়িতে বাধ্য হয়ে ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে নতুন জামা-কাপড় পড়তে হতো। একপর্যায়ে আমি ইসলাম সম্পর্কে গভীরভাবে আগ্রহ পোষণ করলাম অন্তরে। তাই ছাত্রী পড়ানোর বেতন পেয়ে একটি লাইব্রেরি থেকে কিনে ফেললাম বুখারী শরীফ মোটাসোটা একটা হাদীসের বই। ক্লাসে স্যার বলেছিলেন বুখারীতে মুহাম্মাদের কথাগুলো অনেক যাচাই-বাছাই করে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। অন্য হাদীসের তুলনাই সবচাইতে বেশি গ্রহণযোগ্য। বুখারী পড়ে অভিভূত হয়ে গেলাম। ইসলামী জ্ঞানের ভাণ্ডারে এত বিশাল এত বিস্তৃত যে এক জীবনে পড়ে সমস্ত জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব না। শুধু বুখারী পড়েই মনে হয়েছে আমি এতদিন চোখ থাকতেও কতটা অন্ধ ছিলাম।
ইসলাম এত সুন্দর জীবনব্যবস্থা যে আমি একপর্যায়ে কোরআন সুন্নাহর অধিকাংশ বই পড়ে ফেলেছিলাম। কুরআনের প্রথম দিকের বড় বড় সূরাহগুলোর তাফসীর পড়ে ফেললাম সূরা আল ইমরান থেকে সুরা ইউসুফ পর্যন্ত। আগে টিভিতে ইসলামের কোনো চ্যানেল দেখলে আমি বিরক্ত হয়ে Hide করে ফেলতাম। কিন্তু এখন আমি অবসর সময় বাসায় কেউ না থাকলে Peace TV দেখে সময় ব্যয় করতে লাগলাম। আমার কাছে Peace TV লাগতো স্বর্ণের খনির মতো। জাকির নায়েকের লেকচারগুলো যেন আমার জন্যেই দেখানো হয়েছে। মা ততদিনে আমার জীবনযাত্রাই পরিবর্তন দেখেই আমার ওপর কড়া নজর রাখা শুরু হলো। আমি এখন পশ্চিমা পোশাক বাদ দিয়ে বাসাতেও ওড়নাসহ সালোয়ার কামিজ পরা শুরু করেছি। সহপাঠীরা সবাই ততদিন জেনে গেছে আমি ইসলাম পালন করছি। মাথায় ওড়না দেওয়াতে এক মেয়ে উপহাসের সাথেই বলল তুমি মুসলিম হয়েছো নাকি? আমি ফেইসবুকে এখন ইসলামিক পোস্ট দেখতে লাগলাম, খুঁজে খুঁজে ইসলামী পেইজে Add হলাম। সেখানে কিছু দীনি বোনের সাথে আমার পরিচয় ঘটলো, আমার একবারের জন্যেও মনে হলো না যে তারা আমার অজানা, মনে হচ্ছে পূর্বপরিচিত তাদের সাথে আমার অন্তর। সেই দীনি বোনদের সমস্ত কিছু খুলে বললাম, আমার বাসায় পরিস্থিতিও তাদেরকে বুঝিয়ে বললাম। তারা আমার কথাগুলো শ্রবণ করে আমাকে মারহাবার সাথে বললেন আপনি এগিয়ে যান আমরা আপনার সাথে থাকব। কিছুদিন কাটার পর এক দীনি বোন আমার সাথে দেখা করতে চাইলেন আমি দিন তারিখ ঠিক করে দিলাম।
২১ শে জুন ২০০৯ রবিবার এগারোটার দিকে আমি বের হলাম বাসা থেকে। বোনটা একটু দূরে গাড়িতে অপেক্ষায় ছিল। আমাকে দূর থেকে দেখে ডাক দিলো। কাছে যেয়ে দেখলাম আপাদমস্তক কালো হিজাবে ঢাকা অল্পবয়সি মেয়ে। আমার পরনে ছিল কামিজ আর মাথায় ওড়না। গাড়িতে উঠলাম। কিছুদূর যাওয়ার পর গাড়ির ভেতরেই বসে দেখিয়ে ছিলো কীভাবে মাথায় হিজাব পড়তে হয়। সেদিনই প্রথম আবৃত করে হিজাব পড়েছি।
মোহাম্মাদপুরের আল-আমিন মসজিদে এসে থামলো গাড়ি। দোতলায় উঠে দেখি অনেক দীনি বোন চলে এসেছেন। দেওয়ালের ওপাশ থেকে একজন হুজুর খোতবাহ পাঠ করলেন। খুব মনোযোগ সহকারে শুনলাম। এরপর তার সাথে আমি শাহাদাহ বাক্য উচ্চারণ করলাম। একে একে সব দীনি বোন এসে জড়িয়ে অভিনন্দন জানালেন। এরপর একজন ভদ্র মহিলা আসলো দোআর বই এবং একটি উপহার নিয়ে, উপহারটা ছিলো হিজাব, এরপর কেউ একজন মিষ্টি নিয়ে।
হাজির সবাইকে বিতরণ করলেন। আজ প্রথমবারের মতো পবিত্র মাকামে পৌঁছে গেলো মনে হলো যেন রবের নিকটে চলে এসেছি। এরপর যোহরের নামাজ আদায় করে দীনি বোনদের বিদায় জানিয়ে চলে আসলাম। দেখতে দেখতে চলে এসো রমজান। এইমাসে প্রত্যেক মুসলিরে ওপর সিয়াম থাকা বাধ্যতামূলক। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে রমাদানের সিয়াম অন্যতম। আমি যেহেতু মুসলিম হয়েছি, আমারও যেভাবেই হোক না কেন সিয়াম রাখতেই হবে। রমাদান মাসে মায়ের অফিস অন্যদিনের চেয়ে আগে ছুটি হয় তাই যখন ইফতারির সময় তার আগে মা চলে আসবে এই- নিয়ে ভীষণ চিন্তাই ছিলাম আমি তারপরও আল্লাহর ওপর ভরসা রাখি। তাই গোপনে রাতে কিছু শুকনো খাবার এনে রেখে দিতাম ঘরে। প্রথম দিনের রোজা খুব ভালো ভাবেই কাটলো। কিন্তু যেদিন ছুটির দিন মা বাসায় আছেন সেদিন আর রোজা রাখতে না পেরে অনেক হতাশ হলাম আমি। এশারাই নামাজ আদায় করতাম, মা একদিন সন্দেহের বশে আমাকে অত্যন্ত বকাঝোকা করলেন। একপর্যায়ে অনেক কৌশলে আমাকে রোযা রাখতে হতো এবং সালাত আদায় করতে হতো সাদে যেয়ে। কিন্তু মা অত্যন্ত প্রেশার দিতেন একপর্যায়ে মা কে বলেই ফেললাম আমার ইসলাম গ্রহণের কথা এবং সিয়াম পালনের কথা। মা তারপর থেকে কথায় কথায় অভিশাপ দিতে লাগল আমাকে। একপর্যায়ে আমাকে মা কান্নাকাটি করে অনেক বুঝাতে লাগলেন আমাকে কিন্তু আমি ইসলামের পথে অনড় রইলাম। মা যখন বুঝলেন যে আমাকে কোনোকিছু করেই আর ফিরে আনা সম্ভব না তখন আমার সাথেই কথা বলা বন্ধ করলেন। এইভাবে হাজারো বাঁধার মধ্যে কেটে গেলো আমার প্রথমবারের রাখা রমজান মাস।
কিন্তু মহান আল্লাহ সুবহানাহু তা'য়ালার অশেষ ক্রীপায় আর কোনো বাঁধা বিপত্তি আসেনি আমার জীবন। আমার মা এখন আমার ইসলাম গ্রহণ কবুল করে নিয়েছে কিন্তু তিনি এখনও বিধর্মী রয়েছেন। আমি দোআ করি মহান আল্লাহ আমাকে যেভাবে করুণা করে ইসলামের পথে ধাবিত করেছেন ঠিক তেমনি ভাবে আমার মাকেও কবুল করুন। আমিন........
MashaAllah
শুকরিয়া
সময়পযোগী গল্প
👍
মাশা-আল্লাহ
শুকরিয়া
masha Allah
Sukria
Masha Allah
Sukria
মাশাআল্লাহ
শুকরিয়া
sundor
শুকরিয়া
🌺🌺🌺
শুকরিয়া
Masha Allah
Sukria
MashaAllah
Sukria
MashaAllah
Sukria
মাশা আল্লাহ
মাশা আল্লাহ অনেক সুন্দর