সবর ও ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর ঈদু আযহা


সবর ও ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর ঈদুল আযহা
 মু. হামিম সরকার
///
ঈদুল আযহার সাথে জড়িয়ে আছে হযরত ইবরাহিম (আ.), মা হাজেরা এবং হযরত ইসমাঈল (আ.) এর আত্মত্যাগ, ধৈর্য এবং ঈমানের পরীক্ষার এক বিরল নজির। ঈমানী দৃঢ়তার কারণে তাঁরা টপকে গিয়েছিলেন প্রতিটি পরীক্ষা।

পৃথিবীর সর্বপ্রথম কুরবানীঃ
কুরবানীর ইতিহাস খুবই প্রাচীন। সেই আদি পিতা আদম (আ.) এর যুগ থেকেই কুরবানীর বিধান চলে আসছে। আদম (আ.) এর দুই ছেলে হাবিল—কাবিলের কুরবানি পেশ করার কথা আমরা মহাগ্রন্থ আল—কুরআন থেকে জানতে পারি। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন,
‘আদমের দুই পুত্রের (হাবিল ও কাবিলের) বৃত্তান্ত তুমি তাদেরকে যথাযথভাবে শুনিয়ে দাও, যখন তারা উভয়ে কুরবানি করেছিল, তখন একজনের কুরবানি কবুল হলো এবং অন্য জনের কুরবানি কবুল হলো না। তাদের একজন বলল, আমি তোমাকে অবশ্যই হত্যা করব। অপর জন বলল, আল্লাহ তো সংযমীদের কুরবানিই কবুল করে থাকেন। (সূরা মায়িদা: ২৭)
যখন আদম ও হাওয়া (আ.) পৃথিবীতে আগমন করেন এবং তাদের সন্তান প্রজনন ও বংশ বিস্তার আরম্ভ হয়, তখন হাওয়া (আ.)  এর প্রতি গর্ভ থেকে জোড়া জোড়া (জময) অর্থাৎ একসাথে একটি পুত্র ও একটি কন্যা এরূপ জময সন্তান জন্মগহণ করত। কেবল শীস (আ.) ব্যতিরেকে। কারণ, তিনি একা ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন। তখন ভাই—বোন ছাড়া আদম (আ.) এর আর কোন সন্তান ছিল না। তাই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা উপস্থিত প্রয়োজনের খাতিরে আদম (আ.) এর শরীয়তে বিশেষভাবে এ নির্দেশ জারি করেন যে, এই গর্ভ থেকে যে জময পুত্র ও কন্যা জন্মগ্রহণ করবে, তারা পরস্পর সহোদর ভাই—বোন হিসেবে গণ্য হবে। তাদের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক হারাম। কিন্তু পরবতীর্ গর্ভ থেকে জন্মগ্রহণকারী পুত্রের জন্য প্রথম গর্ভ থেকে জন্মগ্রহণকারীনি কন্যা সহোদরা বোন হিসেবে গণ্য হবে না। তাদের মধ্যে পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া বৈধ। সুতরাং সে সময় আদম (আ.) একটি জোড়ার মেয়ের সাথে অন্য জোড়ার ছেলের বিয়ে দিতেন। ঘটনাক্রমে কাবিলের সাথে যে সহোদরা জন্ম নিয়েছিল সে ছিল পরমা সুন্দরী। তার নাম ছিল আকলিমা। কিন্তু হাবিলের সাথে যে সহোদরা জন্ম নিয়েছিল সে দেখতে অতটা সুন্দরী ছিল না। সে ছিল কুশ্রী ও কদাকার। তার নাম ছিল লিওযা। বিবাহের সময় হলে শরয়ী ‘নিয়মানুযায়ী’ হাবিলের সহোদরা কুশ্রী বোন কাবিলের ভাগে পড়ল। কিন্তু কাবিল এ সিদ্ধান্ত মানতে পারলেন না। ফলে আদম (আ.) তৎকালীন শরীয়তের আইনের পরিপ্রেক্ষিতে কাবিলের আবদার প্রত্যাখ্যান করলেন এবং তাকে তার নির্দেশ মানতে বললেন। কিন্তু সে মানল না। এবার তিনি তাকে বকাঝকা করলেন। তবুও সে ঐ বকাঝকায় কান দিল না। অবশেষে আদম (আ.) তার এ দু’সন্তান হাবিল ও কাবিলের মতভেদ দূর করার উদ্দেশ্যে বললেন, ‘তোমরা উভয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে কুরবানি পেশ কর, যার কুরবানি গৃহীত হবে, তার সাথেই আকলিমার বিয়ে দেয়া হবে।’ সে সময় কুরবানি গৃহীত হওয়ার একটি সুস্পষ্ট নিদর্শন ছিল যে, আকাশ থেকে একটি অগ্নিশিখা এসে সে কুরবানিকে ভষ্মীভূত করে ফেলত। আর যার কুরবানি কবুল হতো না তারটা পড়ে থাকত। যাহোক, তাদের কুরবানির পদ্ধতি সম্পর্কে যা জানা যায় তা হলো— কাবিল ছিল চাষী। তাই তিনি গমের শীষ থেকে ভাল ভাল মালগুলো বের করে নিয়ে বাজে মালগুলোর একটি আটি কুরবানির জন্য পেশ করল। আর হাবিল ছিল পশুপালনকারী। তাই সে তার জন্তুর মধ্যে থেকে সবচেয়ে সেরা একটি দুম্বা কুরবানির জন্য পেশ করল। এরপর নিয়মানুযায়ী আকাশ থেকে অগ্নিশিখা এসে হাবিলের কুরবানিটি ভষ্মীভূত করে দিল। [ফতহুল ক্বাদীরের বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, হাবিলের পেশকৃত দুম্বাটি জান্নাতে উঠিয়ে নেওয়া হয় এবং তা জান্নাতে বিচরণ করতে থাকে। অবশেষে ইসমাঈল যাবিহুল্লাহ (আ.) কে ঐ দুম্বাটি পাঠিয়ে বাঁচিয়ে দেয়া হয়।] আর কাবিলের কুরবানি যথাস্থানেই পড়ে থাকল। অর্থাৎ হাবিলেরটি গৃহীত হলো আর কাবিলেরটি হলো না। কিন্তু কাবিল এ আসমানি সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারল না। এ অকৃতকার্যতায় কাবিলের দুঃখ ও ক্ষোভ আরো বেড়ে গেল। সে আত্মসংবরণ করতে পারল না এবং প্রকাশ্যে তার ভাইকে বলল, ‘আমি অবশ্যই তোমাকে হত্যা করব। হাবিল তখন ক্রোধের জবাবে ক্রোধ প্রদর্শন না করে একটি মার্জিত ও নীতিগত বাক্য উচ্চারণ করল, এতে কাবিলের প্রতি তার সহানুভূতি ও শুভেচ্ছা ফুটে উঠেছিল। হাবিল বলেছিল, ‘তিনি মুত্তাকীর কর্মই গ্রহণ করেন। সুতরাং তুমি তাকওয়ার কর্মই গ্রহণ করো। তুমি তাকওয়া অবলম্বন করলে তোমার কুরবানিও গৃহীত হতো। তুমি তা করোনি, তাই তোমার কুরবানি প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। এতে আমার দোষ কোথায়?.... তবুও এক পর্যায়ে কাবিল হাবিল কে হত্যা করে ফেলল।
কুরআনে বর্ণিত হাবিল ও কাবিল কতৃর্ক সম্পাদিক কুরবানির এ ঘটনা থেকেই মূলত কুরবানির ইতিহাসের গোড়াপত্তন হয়েছে। তারপর থেকে বিগত সকল উম্মতের উপরে এটা জারি ছিল। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
‘প্রত্যেক উম্মতের জন্য আমি কুরবানির বিধান রেখেছিলাম, যাতে তারা উক্ত পশু যবেহ করার সময় আল্লাহর নাম স্মরণ করে এ জন্য যে, তিনি চতুষ্পদ জন্তু থেকে তাদের জন্য রিযিক নির্ধারণ করেছেন।
(সূরা হজ্জ: ৩৪)
আদম (আ.) থেকে মুহাম্মদ (সাঃ) পর্যন্ত প্রত্যেক জাতিকে আল্লাহ তা’য়ালা তার নৈকট্য লাভের জন্য কুরবানির বিধান দিয়েছেন।

হযরত ইবরাহিম (আ.) এর ধৈর্য ও ত্যাগের দৃষ্টান্তঃ
[ইবরাহিম (আ.) যখন আমার কাছে দু’য়া করল] হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে এক সৎকর্মশীল পুত্র সন্তান দান কর। অতঃপর আমি তাকে এক অতি ধৈর্যশীল পুত্রের সুসংবাদ দিলাম। অতঃপর সে যখন তার পিতার সাথে চলাফেরা করার বয়সে পৌঁছল, তখন ইবরাহিম বলল, ‘বৎস! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি তোমাকে যবেহ করছি, এখন বল, তোমার অভিমত কী? সে বলল, ‘হে পিতা! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে আপনি তাই করুন, আল্লাহ চাইলে আপনি আমাকে ধৈর্যশীলই পাবেন। দু’জনেই যখন আনুগত্যে মাথা নুইয়ে দিল আর ইবরাহিম তাকে কাত করে শুইয়ে দিল। তখন আমি তাকে ডাক দিলাম, ‘হে ইবরাহিম! স্বপ্নে দেয়া আদেশ তুমি সত্যে পরিণত করেই ছাড়লে। এভাবেই আমি সৎকর্মশীলদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি। অবশ্যই এটা ছিল একটি সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আমি এক মহান কুরবানীর বিনিময়ে পুত্রটিকে ছাড়িয়ে নিলাম। আমি তাঁকে পরবতীর্দের মাঝে স্মরণীয় করে রাখলাম। ইবরাহিমের উপর শান্তি বর্ষিত হোক! সৎকর্মশীলদেরকে আমি এভাবেই প্রতিদান দিয়ে থাকি। সে ছিল আমার মু’মিন বান্দাহদের অন্তর্ভূক্ত। (সূরা আস—সাফফাত: ১০০—১১১]

ইবরাহিম (আ.) যখন তার পিতৃভূমি থেকে হিজরত করলেন, তখন তিনি তার প্রভুর কাছে চেয়েছিলেন যে, তিনি যেন তাকে সৎকর্মশীল সন্তান দান করেন। তাই আল্লাহ তা’য়ালা তাকে একজন ধৈর্যশীল পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দিয়েছিলেন। এটা ছিল ইসমাঈল (আ.) এর ব্যাপারে কেননা, তিনি ছিলেন ইবরাহিম (আ.) এর ঔরসে জন্ম নেওয়া প্রথম সন্তান।
এরপর শুরু হলো পরীক্ষা।

শিশু সন্তান সহ মা হাজেরাকে নিবার্সনঃ
মিশর থেকে ফিরে কেনানে আসার পর এক বছর পর প্রথম সন্তান ইসমাঈলের জন্ম হয়। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই তিনি শিশু সন্তান ও তার মা হাজেরাকে মক্কার নির্জন পাহাড়ি উপত্যকায় নিঃসঙ্গভাবে রেখে আসার নির্দেশ লাভ করেন। যা ছিল অত্যন্ত কঠিন পরীক্ষা। বৃদ্ধ বয়সে পাওয়া কলিজার টুকরা একমাত্র সন্তান নির্জন মরু প্রান্তরে ফেলে আসা অত্যধিক ধৈর্য ও ত্যাগের জলন্ত উপমা।
ইবরাহিম (আ.) তাদের জন্য ২—৩ দিনের খাবার এক থলে খেজুর ও এক মশক পানিসহ বর্তমান ফিলিস্তিনের খলিল শহর থেকে কাবার চত্বরে রেখে গেলেন। রেখে যেতে মন চায় না ইবরাহিম (আ.) এর তবুও রেখে যেতে হবে কারণ, তিনি আল্লাহর নিদের্শ পালনে সদা তৎপর। এ সময় ইবরাহিম (আ.) হাত তুলে দোয়া করলেন—
“হে আমাদের রব! আমি একটি তৃণ পানিহীন উপত্যকায় নিজের বংশধরদের একটি অংশকে তোমার পবিত্র গৃহের কাছে এনে বসবাস করিয়েছি। পরওয়ারদিগার! এটা আমি এজন্য করেছি যে, এরা এখানে নামাজ কায়েম করবে। কাজেই তুমি লোকদের মনকে এদের প্রতি আকৃষ্ট করো এবং দলসমূহ দিয়ে এদের আহারের ব্যবস্থা করো হয়তো এরা শোকরগুজার হবে। (সূরা আল ইবরাহিম—৩৭)

মূল পরিক্ষা ও সবরঃ
একমাত্র শিশুপুত্র ও তার মাকে মক্কায় রেখে এলেও ইবরাহিম (আ.) মাঝে—মধ্যে সেখানে যেতেন ও দেখাশোনা করতেন। এভাবে ইসমাঈল ১৩—১৪ বছর বয়সে উপনীত হলেন এবং পিতার সঙ্গে চলাফেরা করার উপযুক্ত হলেন। বলা চলে যে, ইসমাঈল (আ.) যখন বৃদ্ধ পিতার সহযোগী হতে চলেছেন এবং পিতৃ হৃদয় পুরোপুরি জুড়ে বসেছেন, ঠিক সেই সময় আল্লাহ ইবরাহিম (আ.) এর মহব্বতের কুরবানি কামনা করলেন। বৃদ্ধ বয়সের চক্ষুশীলকারী একমাত্র সন্তান ইসমাঈলের মহব্বত ইবরাহিম (আ.) কে দুর্বল করে ফেলে কি—না, মহান আল্লাহ তায়ালা সেটাই যাচাই করতে চাইলেন।
পিতা—পুত্র আল্লাহর নির্দেশিত কুরবানির স্থান ‘মিনায়’ উপস্থিত হলেন। সেখানে পৌঁছে পিতা পুত্রকে তাঁর স্বপ্নের কথা বর্ণনা করলেন এবং পুত্রের অভিমত চাইলেন। পুত্র তার অভিমত ব্যক্ত করার সময় বললেন, ‘ইনশাআল্লাহ আপনি আমাকে সবরকারীদের অন্তভূর্ক্ত পাবেন। এরপর ইবরাহিম (আ.) চূড়ান্ত পরীক্ষা সম্পন্ন করলেন।
হযরত ইবরাহিম (আ.) ধৈর্য ও ঈমানে দৃঢ়তার সাথে এসকল কঠিন কঠিন পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়ে যান।

মা হাজেরা রা. এর ধৈর্য ও ত্যাগের দৃষ্টান্তঃ
ইবরাহিম (আ.) যখন মক্কার মরুপ্রান্তরে রেখে যাচ্ছেন তখন তার একটিই প্রশ্ন ‘আপনি কি মহান আল্লাহর নির্দেশে রেখে যাচ্ছেন? এ মহীয়সী নারী আর কোনো প্রশ্ন করেননি। সন্তানের ভবিষ্যৎ কামনা করে বারবার প্রশ্নবাণে জর্জরিত করেননি। বরং চরম ধৈর্য অবলম্বন করেছেন।
খুব কম পরিমাণ খাদ্য—পানীয় প্রদান করলেও তা নিয়ে ঝগড়া বিবাদ করেননি। বরং স্বামী ইবরাহিম (আ.) চলে গেলে কলিজার ধন শিশু ইসমাঈলের আহার জোগাড় করার সে কি প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। একবার সাফা পাহাড়ে দৌড়ান আর প্রিয় পুত্রের দিকে নজর দেন আবার মারওয়া পাহাড় অভিমুখে দৌড় দেন। এভাবে সাতবার করার পর শিশু ইসমাঈলের গোড়ালির আঘাতে সেই বরকতময় প্রস্রবণ আবিষ্কার হয় যাকে বলে ‘জমজম’ কূপ। যার পানি খেয়ে মানুষ ধন্য হয়। পিপাসা মিটায়।
মা হাজেরা অত্যন্ত ধৈর্যসহকারে কষ্ট করে তাকে লালন পালন করেন। কোন দিন স্বামীর প্রতি দোষারোপ করেননি। নিত্য—বাজার প্রদান না করার জন্য কোনো অভিযোগ বা অনুযোগ করেননি। এককভাবে মহান আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থা রেখে এমনভাবে ইসমাঈল (আ.) কে গঠন করেছেন যিনি হয়েছেন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহু (সাঃ)’র বংশের প্রধান ব্যক্তি। তার মাধ্যমে আরব কুরাইশদের সূচনা। তিনিই প্রথম বিশুদ্ধ আরবিভাষী মানুষ। কত সবর কত ত্যাগ স্বীকার করেছেন। কী ধরনের আস্থা ও বিশ্বাস আল্লাহর প্রতি সেই মায়ের, যে কোনো কিছুর তেমন সাহায্য না পেয়েও তার সন্তান কে ‘কাবা ঘরের’ নির্মাণকারী বানাতে সক্ষম হয়েছে! সশ্রদ্ধ সালাম এবং দোয়া মা হাজেরার প্রতি।

ইসমাঈল (আ.) এর ত্যাগ ও কুরবানিঃ
পিতা ইবরাহিম (আ.) ইসমাঈলের যেভাবে লালন পালন করেছেন সে ব্যাপারে পিতাকে কিছু বলেননি। পিতার এ রকম না আসার কারণ বা নির্জন প্রান্তরে ফেলে যাওয়ার কোনো কৈফিয়ত তলব করেননি।
ইবরাহিম (আ.) যখন সন্তানকে কুরবানি করার স্বপ্নের কথা বললেন, তখন তিনি কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি। বরং আল্লাহর ইচ্ছা বাস্তবায়নে পিতাকে পূর্ণ সাহায্য করেছেন।
১৪ বা ১৫ বছরের কিশোর। কত কিছুই তো করে! কিন্তু ইসমাঈল (আ.) মহান আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা ও ঈমানের সাথে পিতা ও নবী ইবরাহিম (আ.) যাতে ভালো করে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেন সে জন্য পূর্ণ সহায়তা প্রদান করেছেন।

উপসংহারঃ
আল্লাহ যখন ছেলেকে যবেহ করার হুকুম করলেন তখন ইবরাহিম (আ.) এই হুকুমকে রদ করার জন্য আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করলেও করতে পারতেন। তিনি বলতে পারতেন—
১। হে আল্লাহ তোমার জন্য আগুনে গিয়েছি, দেশ ছেড়েছি, ঘরবাড়ী ধনসম্পদ আত্মীয়—স্বজন সব ছেড়েছি। এসব কিছুর বিনিময়ে আমার ছেলেটাকে কুরবানি করা থেকে রেহাই দাও, আল্লাহ এই হুকুমটাকে তুমি ফেরত নাও কিন্তু তা তিনি বলেননি।
২। তিনি একথাও বলতে পারতেন যে আল্লাহ তোমার দ্বীন প্রচারের জন্যই ছেলে চেয়েছিলাম, আল্লাহ একে দ্বীনের কাজের জন্যেই বেঁচে থাকতে দাও। অথবা
৩। তিনি বলতে পারতেন আল্লাহ তুমি এ কেমন নিষ্ঠুর হুকুম দিলে। এমনকি মনে মনেও চিন্তা করতে পারতেন যে, আল্লাহর এ হুকুমটা কেমন কড়া হুকুম হয়ে গেল। তাও তিনি মনে করেননি।
এই ধরনের কিছুই তিনি বলেননি এবং মনে মনেও এধরনের কোন চিন্তাও তিনি করেননি। কারণ তিনি জানতেন যে,
১। আল্লাহ যা করেন তা ভালোর জন্যেই করেন। তা প্রকাশ্যে অন্য কোন রূপ দেখা গেলেও।
আল্লাহর ইচ্ছার বিপরীত কোন ইচ্ছা করা বা কিছু বলার কোন অধিকার নেই। কারণ তিনি আল্লাহর অনুগত দাস।
৩। আল্লাহর ইচ্ছা ‘ভাল’ না ‘মন্দ’ এ ধরনের চিন্তা করাও কুফরী। কাজেই তিনি কুফরী চিন্তা করবেন কেন?

আল্লাহর চাইতে বেশি বুঝার চিন্তা করা বা দাবি করাও কুফরী। এ সবই তিনি বুঝতেন এবং এ কথাও বুঝতেন আল্লাহর হুকুম পালনের মধ্যেই রয়েছে মানব জীবনের সার্বিক সফলতা। কাজেই তিনি আল্লাহর হুকুমই পালন করতে উদ্যত হলেন। তিনি যখন চোখ বেঁধে যবেহ করেছিলেন তখন তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, আমি কি কাটছি এবং যখন চোখ খুলছিলেন তখনও এই নিয়তেই চোখ খুলছিলেন যে চোখ খুলেই ছেলেকে যবাই অবস্থাই পাবেন। কিন্তু তিনি তা দেখলেন না। দেখলেন ছেলে ঠিকই বেঁচে আছে, ছেলের পরিবর্তে একটি দুম্বা যবাই অবস্থাই আছে। আল্লাহ বললেন এটা একটা স্পষ্ট বড় ধরনের পরীক্ষা। প্রশ্ন, তিনি কি পূর্বে জানতে যে, ছেলে এভাবে বেঁচে যাবে? না তা জানতেন না, যেমন জানতেন না আগুনে যাওয়ার পূর্বে যে সেখান থেকে না পুড়ে জীবিত অবস্থায় ফিরে আসা যাবে। তিনি তো ছেলেকে তাঁর নিয়ত মুতাবিক কুরবানি করেই দিয়েছিলেন। এখন প্রশ্ন আল্লাহর হুকুম না মানলে এমন কি অপরাধ হতো? অপরাধ হতো এতটুকু যে তাঁকে যখন আল্লাহ বলেছিলেন, “আসলিম” “তুমি মুসলমান হও” অথার্ৎ তুমি আল্লাহর পুরা অনুগত হও তখন তিনি বলেছিলেন” আসলামতু লিরাব্বিল আ’লামিন।”
আমি রাব্বুল আ’লামিনের পুরা অনুগত হয়ে গেলাম। একথা বলার পর আল্লাহর যে কোন হুকুম পালন না করার অর্থ হলো আল্লাহর অনুগত না থাকা বা আল্লাহর আনুগত্য না করা। আর অনুগত না থাকার অর্থই মুসলমান থাকতে রাজী না থাকা। এসব তিনি বুঝতেন বলেই আল্লাহর যে কোন হুকুম তিনি মাথা পেতে মেনে নিয়েছেন। কারণ, তিনি জানতেন যে, মুখে মুখে মুসলমান দাবী করা আর কাজে অন্য কিছু করার নাম মুসলমানী নয়।



তথ্য সূত্রঃ
* কুরবানির ইতিহাস উদ্দেশ্য ও কতিপয় বিধান— ড. মুহাম্মদ আব্দুল কাদের
* কুরবানীর তাৎপর্য— সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদী
* কুরবানী ও জাবীহুল্লাহ— ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর
* কুরবানির শিক্ষা— খন্দকার আবুল খায়ের




Next Post Previous Post
4 Comments
  • বাশিরুল আলম
    বাশিরুল আলম June 12, 2023 at 1:22 PM

    অনেক উপকারী লেখা।।।।।

    • Alokkonika
      Alokkonika May 5, 2024 at 9:35 AM

      Sukria

  • Anonymous
    Anonymous July 4, 2023 at 8:47 PM

    ALHAMDULILLAH

    • Admin
      Admin July 5, 2023 at 1:03 PM

      শুকরিয়া

Add Comment
comment url