আল কুরআন সংরক্ষণ ও সংকলনের ইতিহাস


আল কুরআন সংরক্ষণ ও সংকলনের ইতিহাস


রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে কুরআন সংরক্ষণের পদ্ধতি

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর যখন কুরআন নাজিল হয়, তখন তিনি তা মুখস্থ করার চেষ্টা করেন এবং এর জন্য তিনি আপ্রাণ চেষ্টা চালাতে থাকেন। পরবর্তী সময়ে আল্লাহ ওহি নাজিলের মাধ্যমে তাঁকে জানিয়ে দেন যে, কুরআন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অন্তরে সংরক্ষণ করে দেওয়ার দায়িত্ব তাঁর। আল্লাহ বলেন- ‘(হে রাসূল) আপনি এই ওহি তাড়াতাড়ি মুখস্থ করার জন্য, আপনার জিহ্বাকে খুব তাড়াতাড়ি নাড়াবেন না। নিশ্চয়ই এটা (কুরআন) মুখস্থ করানো ও পড়ানো আপনার দায়িত্ব।’ (আল কুরআন- ৭৫: ১৬, ১৭)। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন- ‘আমি এই ওহি তোমাকে পড়িয়ে দিবো, অতঃপর তুমি তা আর ভুলবে না।’ (আল কুরআন- ৮৭: ০৬)। রাসূল (সা.)- এর যুগে সাহাবায়ে কেরাম (রা.) দু’ভাবে কুরআন সংরক্ষণ করেন।
১.    মুখস্থকরণের মাধ্যমে: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পাশাপাশি সাহাবায়ে কেরাম (রা.) মুখস্থ করার মাধ্যমে কুরআন সংরক্ষণ করেন। তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজন হাফেজে কুরআন ছিলেন। হাফেজে কুরআনগণের মধ্যে ইবনে জাবাল (রা.), উবাই ইবনে কাব (রা.), যায়িদ বিন সাবিত (রা.), আবু যায়িদ (রা.), আবু দারদা (রা.) প্রমুখ।
২.    লেখার মাধ্যমে: অপরদিকে রাসূল (সা.)- এর জীবদ্দশায় সাহাবায়ে কেরামদের কুরআন সংরক্ষণের নির্দেশ দেন এবং কুরআন ব্যতীত রাসূল (সা.)- এর হাদিসসহ অন্য সকল বিষয় লিপিবদ্ধ করা নিষিদ্ধ ছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- ‘তোমরা আমার থেকে কুরআন ব্যতীত অন্য কিছু লিপিবদ্ধ করো না। যদি কেউ তা করে থাকে, তবে সে যেন তা মুছে দেয়।’ (মুসলিম: ৫৩২৬)
তা ছাড়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরআন লিপিবদ্ধ করে রাখার জন্য অভিজ্ঞ কাতেব নিয়োগ করেন। প্রায় ৪২ জন কাতেব তথা লিপিবদ্ধকারীর নিরলস প্রচেষ্টায় নির্ভুল ও সন্দেহমুক্তভাবে কুরআনকে লিপিবদ্ধ করা হয়।

আবু বকর (রা.)- এর যুগে কুরআন সংরক্ষণের পদ্ধতি

রাসূল (সা.)- এর ইন্তিকালের পর ওমর (রা.) আবু বকর (রা.)- কে কুরআন একটি নির্দিষ্ট গ্রন্থাকারে লিপিবদ্ধ করার পরামর্শ দেন। কিন্তু আবু বকর (রা.) রাসূর (সা.) যে কাজ করেননি, সেই কাজ করতে অস্বীকৃতি জানান। পরবর্তী সময়ে ভণ্ডনবী মুসায়লামাতুল কাজ্জাবের বিরুদ্ধে সংঘটিত ইয়ামামার যুদ্ধে অসংখ্য হাফেজে কুরআন শাহাদাতবরণ করেন। এতে নতুন করে আল কুরআন বিলুপ্তির আশঙ্কা দেখা দেয়। যার কারণে আবু বকর (রা.) ওমর (রা.)- এর পরামর্শ পুনর্বিবেচনা করে যায়েদ বিন সাবিতের নেতৃত্বে আল কুরআন সংকলন বোর্ড গঠন করেন। এ বোর্ডের সদস্যদের অবিরাম প্রচেষ্টা ও অক্লান্ত পরিশ্রম করে বিভিন্নজনের নিকট  ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা আল কুরআনের বিভিন্ন অংশকে একত্র করেন এবং এই লিপিবদ্ধ গ্রন্থটি হাফেজে কুরআন সাহাবিদের সাথে মুতাওয়াতির পদ্ধতিতে যাচাই বাছাই করে সংকলন করা হয়, যার নাম দেওয়া হয় মুসহাফে সিদ্দিকি। আবু বকর (রা.)- এর ইন্তেকালের পর এই গ্রন্থটি ওমর (রা.)- এর কাছে এবং তাঁর ইন্তেকালের পর তাঁর কন্যা হাফসা (রা.)- এর নিকট সংরক্ষিত থাকে।

উসমান (রা.)- এর যুগে কুরআন সংরক্ষণের পদ্ধতি

ওমর (রা.) ও উসমান (রা.) এই দু’জন খলিফার খেলাফতকালে ইসলামী রাষ্ট্রের বিস্তৃতি আরবের বিভিন্ন ভূখণ্ডে ছড়িয়ে পড়ে, যার ফলে আরবের বিভিন্ন অঞ্চলের লোকেরা তাদের নিজস্ব আঞ্চলিক ভাষায় কুরআন তিলাওয়াত করতে থাকেন। এতে কুরআনের উচ্চারণ ও অর্থ বিকৃতির আশঙ্কা দেখা দেয়। যার ফলে উসমান (রা.) বিভিন্ন রাজ্য থেকে বিকৃত অংশগুলো সংগ্রহ করে পুড়িয়ে দেন এবং মুসহাফে সিদ্দিকির অনুরূপ সাতটি কপি করে বিভিন্ন প্রদেশে পাঠিয়ে দেন। বর্তমানে আমাদের নিকট যে কুরআন মওজুদ রয়েছে, তা মুসহাফে উসমানি হিসেবেই পরিচিত। এর কোনো পরিবর্তন ও পরিবর্ধন হয়নি।
Next Post Previous Post
2 Comments
  • Anonymous
    Anonymous December 8, 2023 at 4:10 PM

    jajakillah

    • Admin
      Admin June 9, 2024 at 1:32 AM

      Sukria

Add Comment
comment url