আল কুরআনের নামসমূহ | আল কুরআনের প্রকৃত নাম | আল কুরআনের গুণবাচক নাম

 

আল কুরআনের নামসমূহ

মহাগ্রন্থ আল কুরআন মহান আল্লাহ বাণী সমষ্টি। মানবজাতির হেদায়েতের জন্য মহান আল্লাহ এ কুরআন নাজিল করেছেন। পবিত্র কুরআনের পরিচয় প্রদান করতে গিয়ে মহান আল্লাহ কতিপয় নাম ও সিফাতসমূহ বর্ণনা করেছেন।

আল কুরআনের নামসমূহঃ আল-কুরআনের নামসমূহ দু’শ্রেণিতে বিভক্ত। যথা:
    (ক) প্রকৃত নাম ও
    (খ) সিফতী নাম।

❏ (ক) প্রকৃত নামঃ
(১) আল কুরআন (القران): পবিত্র কুরআনের প্রথম এবং সর্বশ্রেষ্ঠ নাম হলো القران (আল-কুরআন)। যার অর্থ হলো অধিক পঠিত। এ নাম সম্পর্কে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন- এই কুরআন এমন পথ প্রদর্শন করে, যা সর্বাধিক সরল। (সূরা ইমরান: ৯)
(২) আল কিতাব (الكتاب): আল কিতাব (الكتاب) পবিত্র কুরআনের অন্যতম একটি নাম, যার অর্থ সন্নিবেশিত। মানবজাতির প্রয়োজনীয় সকল বিষয় পবিত্র কুরআনে সন্নিবেশিত করা হয়েছে বিধায়, একে الكتاب (আল কিতাব) বলা হয়। মহান আল্লাহ তা’য়ালা বলেন- আমি তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ করেছি কিতাব যাতে রয়েছে তোমাদের জন্য উপদেশ। (সূরা আম্বিয়া: ১০)
(৩) আল ফুরকান (الفرقان): পবিত্র কুরআনের আরেকটি নাম হলো الفرقان (আল ফুরকান)। যার অর্থ পার্থক্যকারী। যেহেতু আল কুরআন হক ও বাতিল, সত্য ও মিথ্যা, শিরক ও তাওহীদের মধ্যে পার্থক্য করে তাই একে الفرقان (আল ফুরকান) বলা হয়। মহান আল্লাহ বলেন, মহান মহিমান্বিত সত্তা তিনি, যিনি তাঁর বান্দার প্রতি নাজিল করেছেন ফুরকান, যাতে তিনি বিশ্বজগতের জন্য সতর্ককারী হতে পারেন। (সূরা ফুরকান: ১)
(৪) আয-যিকর (الذكر): আয-যিকর (الذكر) পবিত্র কুরআনের আরেকটি নাম। যার অর্থ হলো উপদেশ। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহর বিধি-নিষেধ সম্বলিত মানবজাতির জন্য বিভিন্ন উপদেশ নাজিল হয়েছে, বিধায় একে আয-যিকর (الذكر) বলা হয়।আল্লাহ তা’য়ালা বলেন- আমিই যিকর (কুরআন) নাজিল করেছি এবং আমিই এর সংরক্ষক। (আল হিজর:৯)
(৫) আত-তানযীল (التنزيل): মানবজাতির হেদায়েতের জন্য পবিত্র কুরআন মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নাজিল হয়েছে, বিধায় একে التنزيل (আত-তানযীল) বলা হয়। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন- নিশ্চয় তা (কুরআন) বিশ্বজগতের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ। (সূরা শুআরা: ১৯২)
 
❏ (খ) সিফাত বা গুণবাচক নাম:
(১) আন-নূর (النور): আন-নূর অর্থ আলো। পবিত্র কুরআন হলো আলো তথা হেদায়েতের উৎস, তাই একে النور (আন-নূর) বলা হয়েছে। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন- এবং আমি তোমাদের নিকট স্পষ্ট জ্যোতি নাজিল করেছি। (সূরা নিসা: ১৯৪)
(২) আল-হুদা (الهدي): আল-হুদা (الهدي) অর্থ হেদায়েত। এটা মানুষকে সুপথে পরিচালিত করে, বিধায় কুরআনকে الهدي (আল-হুদা) বলা হয়েছে। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন- মুমিনদের জন্য হেদায়েত বা রহমত। (সূরা ইউনুস: ৫৭)
(৩) আল-কালাম (الكلام): আল কালাম (الكلام) অর্থ কথা, বাণী। পবিত্র কুরআন মহান আল্লাহর বাণী, বিধায় একে الكلام (আল কালাম) বলা হয়। মহান আল্লাহ তা’য়ালা বলেন- যাতে সে আল্লাহর বাণী (কুরআন) শুনতে পায়।
(৪) আল হাকীম (الحكيم): আল হাকীম (الحكيم) অর্থ জ্ঞানগর্ভ, বিজ্ঞানময়, পবিত্র কুরআন হলো জ্ঞানগর্ভ ও বিজ্ঞানময় বাণী সমূহের সমষ্টি, বিধায় একে الحكيم (আল-হাকীম) বলা হয়। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন- এটা রয়েছে আমার নিকট উম্মুল কিতাবে, এটা মহান, জ্ঞানগর্ভ। (সূরা যুখরুফ: ৪)
(৫) মাজীদ (مجيد): মাজীদ (مجيد) অর্থ সম্মানিত। এটি পবিত্র কুরআনের আরেকটি গুণবাচক নাম।
(৬) আশ-শিফা (الشفاء : (الشفاء (আশ-শিফা) অর্থ প্রতিকার, রোগের প্রতিষেধক। এ কুরআন দ্বারা মানুষের কুফর, শিরক, নিফাক, মুর্খতা, দৈহিক অলসতাসহ বিভিন্ন প্রকার রোগ সারানো যায়। এ জন্য মহান আল্লাহ আল্লাহ পাক الشفاء (আশ-শিফা) নামে অভিহিত করেছেন। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন- হে মানব সকল! তোমাদের প্রতি তোমাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে এসেছে উপদেশ এবং তোমাদের অন্তরে যা আছে, তার প্রতিকার। (সূরা ইউনুস: ৫৭)
(৭) উপদেশ (موعظة : (موعظة (মাউয়িজাত) শব্দের অর্থ উপদেশ। পবিত্র কুরআন মানবজাতির প্রতি উপদেশস্বরূপ নাজিল হয়েছে। তাই একে موعظة বা উপদেশ বলা হয়। মহান আল্লাহ তা’য়ালা বলেন- তোমাদের নিকট তোমাদের রবের পক্ষ থেকে এসেছে উপদেশ। (সূরা ইউনুস: ৫৭)
(৮) রহমত (رحمة : (رحمة (রহমত) শব্দের অর্থ দয়া বা অনুগ্রহ। পবিত্র কুরআন পৃথিবীর সকল মানুষের জন্য অপরিসীম দয়া ও অনুগ্রহ নিয়ে নাজিল হয়েছে। তাই মহান আল্লাহ একে رحمة (আর-রহমত) নামে অভিহিত করেছেন।আল্লাহ তায়ালা বলেন- (কুরআন) মুমিনদের জন্য হেদায়েত ও রহমত। (সূরা ইউনুস: ৫৭)
(৯) মুবারক (مبارك : (مبارك অর্থ বরকত, কল্যাণ। পবিত্র কুরআন মানবজাতির জন্য প্রভুত বরকত ও কল্যাণ বয়ে এনেছে, এজন্য একে مبارك (মুবারক) বলা হয়। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন- আমি এ কল্যাণময় কিতাব নাজিল করেছি, যা তার পূর্ববর্তী কিতাবের সমর্থক। (সূরা আনআম: ৯২)
(১০) মুবীন (مبين : (مبين (মুবীন)অর্থ সুস্পষ্ট। মানবজাতির প্রয়োজনীয় সবকিছু পবিত্র কুরআনে সুস্পষ্ট ভাবে বর্ণনা করেছেন, তাই কুরআনকে مبين (মুবীন) বলা হয়। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন- মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট এসেছে নূর এবং সুস্পষ্ট কিতাব। (সূরা মায়িদা: ৯২)
(১১) বুশরা (بشري : (بشري (বুশরা) অর্থ সুসংবাদ। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ রহমত, বরকত, কল্যাণ, হেদায়েত ও মুক্তির সুসংবাদ প্রদান করেছেন, এজন্য একে بشري (বুশরা) বলা হয়। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন- (কুরআন) পূর্ববর্তী কিতাবের সমর্থক এবং মুমিনদের জন্য হেদায়েত ও সুসংবাদ। (সূরা বাকারা: ৯৭)
পবিত্র কুরআনের আরো অসংখ্য নাম রয়েছে। বিষয় বস্তুর্ উপর নির্ভর করে কুরআনকে এ সকল নামে অভিহিত করা হয়েছে। মানবজাতির প্রতি কুরআন নাজিলের উদ্দেশ্যের বিবেচনায় এ সকল নামকরণ সার্থক হয়েছে।
 
Next Post Previous Post
2 Comments
  • Anonymous
    Anonymous December 19, 2023 at 7:38 PM

    ধন্যবাদ

    • Alokkonika
      Alokkonika April 27, 2024 at 7:44 PM

      শুকরিয়া

Add Comment
comment url