বাইয়াত আল আকাবা
বাইয়াত আল আকাবা
মক্কার অনতি দূরে হেরা পাহাড় ও মিনার মধ্যবর্তী একস্থানের নাম আকাবা। এখানেই পরপর তিনটি বাইয়াত যথাক্রমে ৬২০, ৬২১ এবং ৬২২ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত হয়।
❏ আকাবা শপথঃ হযরত মুহাম্মদ (সা.) যখন মক্কার কুরাইশদের নিকট ইসলাম প্রচার করে নিরাশ হয়ে উঠলেন তখন তিনি আরবের বাইরে বিভিন্ন গোত্রের লোকদের মধ্যে ইসলাম প্রচার শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ৬২০ খ্রিস্টাব্দে হজ্জ্বের মৌসুমে রাসূল (সা.) তার চিরাচরিত অভ্যাস অনুযায়ী দাওয়াতী কাজ করছিলেন। এমন সময় তিনি আকাবা নামক স্থানে কয়েকজন লোককে দেখতে পেলেন। তিনি অত্যন্ত নম্র ও বিনীতভাবে তাদের ইসলামের দাওয়াত দিলেন এবং পবিত্র কুরআনের কয়েকটি আয়াত পাঠ করে শুনালেন। পবিত্র কুরআনের আয়াত শুনে তাদের অন্তরে কম্পন সৃষ্টি হলো। ফলে সাথে সাথে তারা ইসলাম গ্রহণ করে রাসূল (সা.) এর নিকট এই মর্মে শপথ করলেন যে, তারা নিজ জাতির নিকট গিয়ে ইসলামের বাণী প্রচার করবেন। এই শপথই ইসলামের ইতিহাসে আকাবার শপথ নামে পরিচিত। আর এভাবেই আকাবার শপথ সংঘটিত হয়। আকাবায় তিনবার শপথ হয়-
১. নবুওয়াতের দশম বছরে আকাবার প্রথম শপথ;
২. নবুওয়াতের একাদশ বছরে আকাবর দ্বিতীয় শপথ ও
৩. নবওয়াতের দ্বাদশ বছরে আকাবার তৃতীয় শপথ।
১. আকাবার প্রথম শপথঃ নবুওয়াতের দশম বছরে হজ্জ্বের মৌসুমে মদিনার খাজরাজ গোত্রের কয়েকজন লোক মক্কায় এসে গোপনে গোপনে মহানবি (সা.) কে খোঁজ করছিলেন। তারা মক্কা হতে একটু দূরে আকাবা নামক স্থানে এসে আলাপ-আলোচনা করছেন। এমন সময় হযরত মুহাম্মদ (সা.) তাদের নিকট উপস্থিত হয়ে জানতে পারলেন যে, তারা মদিনাবাসী খাজরাজ বংশীয় লোক। মহানবি (সা.) তাদেরকে ইসলামের শিক্ষা ও সভ্যতার দিকে আহ্বান করলেন এবং কুরআন মাজিদের কয়েকটি আয়াত পাঠ করে তাদেরকে ইসলামের দিকে আহ্বান করলেন। তারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং মদিনায় পৌঁছে আল্লাহর মহত্ত্ব প্রচার করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করলেন। এটাই ইসলামের ইতিহাসে আকাবার প্রথম শপথ অর্থাৎ বাইয়াত আল আকাবা নামে পরিচিত। হযরত মুসআব (রা.) নামক এক সাহাবিকে ধর্ম শিক্ষাদোনের জন্য ইয়াসরিব তথা মদিনায় প্রেরণ করলেন। হযরত মুসআব (রা.) ও নবদীক্ষিত মুসলমানদের প্রচেষ্টায় ইয়াসরিবে ইসলাম ধর্মের প্রচার নতুন দিগন্তের সূচনা করে। ইয়াসরিববাসী স্বতঃস্ফূর্তভাবে আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস স্থাপন করে মূর্তিপূজা ত্যাগ করে।
২. আকাবার দ্বিতীয় শপথঃ নবুওয়াতের একাদশ বছরে মদিনার আউস ও খাজরাজ গোত্রের ১২ জন লোক পূর্ব কথিত আকাবা নামক স্থানে হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর সাথে সাক্ষাৎ করে ইসলামের শপথ গ্রহণ করেন। স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করার সময় তাঁদের আবেদনে ধর্মীয় আহকাম শিক্ষা দেওয়ার জন্যে দু’জন প্রতিনিধি প্রেরণ করেন। এটি আকাবার দ্বিতীয় শপথ নামে খ্যাত।
৩. আকাবার তৃতীয় শপথঃ নবুওয়াতের দ্বাদশ বছর আকাবার দ্বিতীয় শপথের পর সবাই মদিনায় ফিরে আসে। সেখানে হযরত মুসআব (রা.) ইমামতি করতেন। সে বছর হযরত মুসআব ও হযরত ওয়াইম (রা.) এর হাতে বহুলোক ইসলাম গ্রহণ করেন। তাঁদের মধ্যে উসায়েদ ইবনে হোযায়ের এবং হযরত সাদ ইবনে খাইসাম (রা.) ছিলেন। এ দু’ব্যক্তির ইসলাম গ্রহণের ফলে আউস গোত্রের সব নর-নারী মুসলামান হয়ে যান। এভাবে মদিনায় দ্রুতগতিতে ইসলাম প্রসার লাভ করতে থাকে। ঐ বছর মদিনায় রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সুখ্যাতি ব্যাপকভাবে প্রসিদ্ধি লাভ করে। তাঁদের মধ্য থেকে ৭৩ জন নারী-পুরুষ একসাথে হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর সাথে আকাবা নামক স্থানে শপথ গ্রহণ করেন। তাঁরা প্রতিজ্ঞা করেন যে, আল্লাহ ছাড়া আর কারো উপাসনা করবেন না। তাঁরা ইসলামের আদর্শ ও রীতি মেনে চলবেন এবং তা রক্ষার জন্যে প্রাণপণ চেষ্টা করবেন। সেই রাতে কঠিন শপথের পর রাসূল (সা.) ইসলাম প্রচার ও দ্বীনি তালিমের জন্যে তাঁদের মধ্যে হতে বারোজন নকীব বা প্রচারক নিযুক্ত করেন। ইসলামের ইতিহাসে এটি আকাবার তৃতীয় শপথ নামে খ্যাত।
❏ বাইয়াত আল আকাবার শর্তসমূহঃ
১. আমরা এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহর ইবাদত করব এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করব না।
২. আমরা চুরি ও ব্যভিচারের কাছেও যাবো না।
৩. নিজেদের কন্যা সন্তানদের হত্যা করব না।
৪. কারো উপর মিথ্যা অপবাদ দিব না।
৫. চোগলখুরি করব না।
৬. প্রত্যেক সৎকাজে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) কে মেনে চলব এবং কোনো অন্যায় কাজে তাঁর অবাধ্য হবো না।
♥♥♥
❤️